
নিজস্ব প্রতিবেদক
বগুড়ায় মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন এবং ১০–১২টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের উত্তর চেলোপাড়া ও পশ্চিম নারুলী এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই সহিংসতায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতা পাইলট বাহিনী, সিজান বাহিনী ও মন্ডল বাহিনীর মধ্যে মাদক ব্যবসার অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। চাঁদা না পেয়ে প্রতিপক্ষের ঘরে হামলা চালিয়ে তারা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ১০–১২টি বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়, যার মধ্যে ৫–৬টি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিটি বাড়ি থেকে নগদ ৫–১০ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। এখন তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।
আহতরা হলেন, উত্তর চেলোপাড়া এলাকার মিরাজের ছেলে রবিন (২৫), পিচ্চি মিয়া (২২) এবং মৃত জাবুল প্রামাণিকের ছেলে আশরাফ (২৮)। আহত রবিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাশির।
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুলতান পট্টি এলাকার পাঁচটি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম, পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি চলে। প্রশাসনকে জানানো হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে এখন খুন, লুটপাট আর আগুনে সব শেষ।”
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান বাশির বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার হয়নি।
বগুড়ায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি
বগুড়া জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৯টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। এসব অপরাধের অধিকাংশই মাদক ও দলীয় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক।
নাগরিক সমাজের অভিযোগ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।